সবুজ বৃক্ষ, লতা, গুল্ময়ে ভরে উঠেছে রাঙামাটির উচু নিচু সব পাহাড় । চারিপাশে যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলছে সবুজের সমারোহ। সবুজ পাহাড়ের উপর ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের চাক।
কাপ্তাই হ্রদ ক্রিস্টাল রঙের পানিতে টইটম্বুর। হ্রদের মাঝে ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপ। এ দ্বীপগুলো এক একটি হয়ে উঠেছে এক একটি সেন্ট মার্টিন। দ্বীপে দাঁড়ালে চারিদিক থেকে অবিরাম বাতাস দোলা দিচ্ছে শরীরে। দ্বীপের গায়ে বিরামহীনভাবে আছড়ে পড়ছে ছোট বড় কাপ্তাই হ্রদের পানির ঢেউ। এ যেন স্বর্গের অনুভূতি।
এ বাতাস, এ আকাশ, এ মেঘ, এ রোদ সব মিলে রাঙামাটির বর্তমান প্রকৃতি ভারতের মেঘালয় বা শিলংয়ের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। অথচ এ দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক যায় শিলংয়ে।
শিলং প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলোর জন্য বিখ্যাত। আর রাঙামাটির প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো দেখার উপযুক্ত সময় তো এখনই। কারণ সবুজ পাহাড়ের বুক ছিড়ে বয়ে চলা প্রকৃতির ঝর্ণা ফিরে পেয়েছে তাদের পূর্ণ যৌবন।
পাহাড়ের ঘুরবেন আর পাহাড়ি খাবার খাবেন না তা কি হয়? আদিবাসীদের খাবারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে প্রকৃতি প্রেমীদের। হরেক রকম সুস্বাদু খাবার গ্রহণের উপযুক্ত সময় এখন।
জুম পাহাড়ের জুমের হরেক রকম সুগন্ধিযুক্ত সবজির ভরা মৌসুম এখন। আদিবাসীদের মালিকানাধীন হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো এখন সুগন্ধি ঘ্রাণে ভরে গেছে। সুঘ্রাণে রুচি বাড়াবে যে কারোর।
জুমে উৎপাদিত চিনাল, মারফা, শসা আঠালো মিষ্টি কুমড়া, সুঘ্রাণ চাল কুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙা, ঢেরস, জুম আলু, কচু, আঠালো ভুট্টা, টকপাতা, বাঁশ কোড়ল, আদার ফুল, হলুদ ফুলসহ নাম না জানা অনেক প্রকারের সবজির স্বাদ নেয়ার উপযুক্ত সময় তো এখন।
ছড়ার পানিতে মিলছে কালো খয়রি রঙের চিংড়ি, কালো দাড় কাকড়া। মিলছে ছড়ার মাছও। কালো চিংড়ির বৈশিষ্ট্য হলে হালকা আগুণের তাপ পেলে লালচে রং ধারণ করে।
এ চিংড়ি অথবা দাড় কাকড়া দিয়ে আঠালো মিষ্টি কুমড়া, মারফার তরকারি। নতুন যে একবার এ তরকারী স্বাদ গ্রহণ করে তার অনুভুতি আহা পাহাড় প্রকৃতি আর জীবনাচার। আর কাপ্তাই হ্রদের বাহারী মিঠা পানির মাছ তো আছেই। যে মাছ বাঁশের চোঙার মধ্যে রান্না করা তরকারী খেতে হলে আসতে হবে রাঙামাটিতেই।
কি কি দেখার আছে রাঙামাটি:
রাঙামাটির অপূর্ব প্রকৃতি দেখে দু একদিনে শেষ করা যায় না। কার কোনটা পছন্দ সেটা নির্ভর করে পর্যটকের চাওয়ার উপর।
সুবলং ঝর্ণা ভ্রমণে গেলে সময় নিতে হবে একদিন। সুবলং ভ্রমণে গেলে একদিনে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ হয় অন্যদিকে ঝর্ণা দেখা হয়। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু, এ সেতুর পাতাটন বর্তমানে উঠেছে। পলওয়েল পার্ক, রাজব বিহার, কাপ্তাই আসামবস্তি সড়কের প্রকৃতি। ট্রাকিং করা পর্যটকরা বিলাইছড়ি উপজেলায় যেতে পারে।
যে উপজেলা ঝর্ণার জন্য বিখ্যাত। যেখানে রয়েছে বিখ্যাত ধুপপানি ঝর্ণা, নকাটা ঝর্ণা। এ ঝর্ণা যাওয়ার পথে দেখা মিলেবে পাহাড়ি গ্রাম ও প্রকৃতি।
কোথায় থাকবেন :
কোথায় থাকবেন সেটা নির্ভর করবে নিজের ইচ্ছের উপর। রাঙামাটি শহরে দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলে থাকলে শহুরে ভাব। যেখানে সব সময় যানবাহন কোলাহলযুক্ত। এগুলো হোটেল সুফিয়া, হিল এম্বেসডর, জুম প্যালেস, মোটেল জজ, হোটেল নাদিশা, মতিমহল, সোনার বাংলা, গ্রীন ক্যাসেল অন্যতম।
এ থেকে মুক্তি পেতে হলে যেতে হবে শহর থেকে দুরে। যেগুলোর মধ্যে জুম কিং ইকো রিসোর্ট, রান্যা টুগুন, গাং পাড়, বার্গী লেক ভ্যালী, নিলঞ্জনা, ইজোর, বড়গাং, বেড়ান্ন্যা, রাঙাদ্বীপ অন্যতম। রাঙাদ্বীপ ছাড়া বাকীগুলো সবিই কাপ্তাই আসামবস্তি সড়কে। কাপ্তাই উপজেলা হয়ে আসলে সহজ হয়। রাঙামাটি শহর থেকেও এসব রিসোর্টে যাওয়া যায়। এসব রিসোর্টে রয়েছে ক্যাম্প ফায়ার, কায়াকিং, ফিশিং এবং তাবুতে থাকার বিশেষ ব্যবস্থা।
শহরের কাছে একটু আরাম আয়েশ নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চাইলে রাঙামাটি পর্যটন মোটেলেও থাকা যায়। রাঙামাটি শহরের তবলছড়িতে এর অবস্থান।
এ সময়ে অনেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি সাজেকে যেতে চায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা কাছে হওয়ায় পর্যটকরা খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে দিঘিনালা হয়ে সাজেক যায়।
কোথায় খাবেন:
উল্লেখিত সব রিসোর্টে আদিবাসী খাবার পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আগেই বলতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। রাঙামাটি শহরে থাকা পর্যটকরা রাঙাপানী এলাকায় কেজিআর, রাজবাড়ি এলাকার গ্যালারী, ক্যাফে কবরক, জুম, ব্যম্বু চিকেন, বনরূপা এলাকায় আইরিশ হোটেলে অর্জিনাল আদিবাসী খাবার পাবেন। সাধারণ মোরগ পোলাও গতানুগতিক খাবার খেতে চাইলে বনরূপা, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজারে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্টে আদিবাসী খাবার পাওয়া যাবে না।
কিভাবে আসবেন:
ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসা যায় সহজে। ঢাকার কলাবাগান, পান্থপথ, ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন যাত্রী নিয়ে আসে রাঙামাটিতে। সব পরিবহনের নাইট কোচ চালু আছে। সময় লাগে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা। বাস ভ্রমণ পরিহার করতে চাইলে আকাশ পথে সহজে রাঙামাটি আসা যায়। ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে ৩০ মিনিট সময়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর। সেখান থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে রাঙামাটি পৌছানো যায়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। দাম নেবে রাঙামাটি পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। রাঙামাটির পরিচিত বা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আগেভাগে যোগাযোগ করলে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।