বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
মূলপাতাঅপরাধস্ত্রী চেয়ারম্যান স্বামীর দাপট অস্বস্তিতে জেলা পরিষদ

স্ত্রী চেয়ারম্যান স্বামীর দাপট অস্বস্তিতে জেলা পরিষদ

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজার বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের সদস্য ও কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণের পাশাপাশি সব দফতরে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযোগ করেছেন এ নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন পরিষদের নব নিযুক্ত সদস্যসহ পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেন, কাগজে কলমে জিরুনা ত্রিপুরা চেয়ারম্যান হলেও মূলত পরিষদ চালাচ্ছেন তার তার স্বামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রেবিলিয়াম রোয়াজা। এ নিয়ে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের পাশের একটি কক্ষ দখলে নিয়ে সেখানে বসেন রেবিলিয়াম রোয়াজা। সেখান থেকে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রমসহ হস্তান্তরিত ২৪টি দপ্তরের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন এবং প্রভাব খাটাচ্ছেন।

এ ছাড়াও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন রেবিলিয়াম রোয়াজা। পাশাপাশি চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার সাথে সকল দপ্তরে সফর সঙ্গীও হচ্ছেন তিনি।

শুধু খাগড়াছড়ি নয়, চেয়ারম্যানের দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও কক্সবাজারে ইউএনডিপির বাৎসরিক পরিকল্পনা কর্মশালায়ও অংশ নিয়েছেন তার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা জেলা পরিষদে নিযুক্ত হবার সাথে সাথেই তার স্বামীর নিকটাত্মীয়দেরও পুনর্বাসন করেছেন জেলা পরিষদে।

কাগজে কলমে না থাকলেও চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার রয়েছে চারজন ব্যক্তিগত সহকারী। যারা সকলেই তার স্বামীর নিকটাত্মীয়। এরমধ্যে সুমিনা ত্রিপুরাকে ব্যক্তিগত সহকারী, দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত দুইজন সহকারী অঞ্জুলাল ত্রিপুরা ও তরুণ ত্রিপুরা এবং জীতেন ত্রিপুরা নামে আরও একজনকে রেখেছেন পরামর্শক হিসেবে।

এ ছাড়া জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজে সদস্যদের জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা করা না হলেও চেয়ারম্যান তার স্বামীসহ চার সহকারীকে নিয়ে দখল করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের পুরো রেস্ট হাউজ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাদের নিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের কদমতলী এলাকার জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেই থাকেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

তবে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা বলেন, ‘আমি আমার সহধর্মীনিকে সহযোগিতা করার জন্যই জেলা পরিষদে যাই। এর বেশি কিছু নয়। আমি কোনো কর্মকর্তার ওপর প্রভাবও খাটাই না। এ ছাড়া যে চারজন সহকারী রয়েছে তাদের মধ্যে একজন আমার ছোট বোনের জামাই আর বাকীরা আমাদের পাড়া প্রতিবেশী হিসেবে সহযোগিতা করতে আসে।’ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাড়ার চেয়ারম্যানের সাথে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম। তবে কোনো পদ পদবিতে ছিলাম না।’

গত ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জিরুনা ত্রিপুরা নামে এক অপরিচিত নারীকে চেয়ারম্যান এবং আরও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর দুইদিন পর ১০ নভেম্বর নব নিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। জিরুনা ত্রিপুরা চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাকে নিয়ে জেলা জুড়ে বিস্তর সমালোচনা চলছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine

Recent Comments