বুধবার, আগস্ট ১৩, ২০২৫
মূলপাতাঅর্থনীতিসরকারী উন্নয়ন ও সেবা থেকে বঞ্চিত জুরাছড়ির তঞ্চঙ্গ্যারা

সরকারী উন্নয়ন ও সেবা থেকে বঞ্চিত জুরাছড়ির তঞ্চঙ্গ্যারা

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের দুর্গম বটতলী গ্রামে বাস করে প্রায় ৬০টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের মানুষ।

পাহাড়ি জনপদের এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন যেন এক অব্যাহত সংগ্রামের গল্প। উন্নয়নের সুফল কিংবা সরকারি সেবার ছোঁয়া—কোনোটাই পৌঁছায়নি আজও এই গ্রামে।

প্রথমত, যোগাযোগ ব্যবস্থা এই গ্রামে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। বটতলী থেকে নিকটবর্তী শীলছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে ৪০ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়।  নেই কোনো পাকা রাস্তা বা যানবাহন সুবিধা। ফলে অসুস্থ রোগী, বিশেষ করে জরুরি অবস্থার রোগীদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময়ই ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। স্বাস্থ্যসেবার অভাবও তীব্র। গ্রামে নেই কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক বা প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিলে মহিলারা, শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। অনেক সময় চিকিৎসা না পেয়ে রোগের প্রকোপ বাড়ে। এ অবস্থায় স্থানীয়দের একমাত্র দাবিই হলো—একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন।

শিক্ষা ব্যবস্থাও করুণ। প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও তা মানসম্মত নয়। পর্যাপ্ত শিক্ষক ও উপকরণের অভাবে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় সন্ধ্যার পর পড়ালেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও বটতলীর ঘরে ঘরে এখনো সেই সোলার পৌঁছায়নি।

গ্রামের কার্বারী আঞ্জল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আমরা বছরের পর বছর সরকারের সব সেবা থেকে বঞ্চিত। আমাদের ঘরে ঘরে সোলার স্থাপন ও মহিলাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার উদ্যোগ নিলে উন্নয়নের পথে এগোতে পারব।

স্থানীয় হেডম্যান রিপন তালুকদার জানান, “বটতলীতে ৫০-৬০ পরিবারের তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে। কিন্তু আজও যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ—সবকিছু থেকে বঞ্চিত।” তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর এ অবস্থার উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সুবিধা ও উন্নত শিক্ষা অবকাঠামো নিশ্চিত করা গেলে এই প্রান্তিক মানুষের জীবনমান বদলে যেতে পারে। পাহাড়ের এই বঞ্চিত মানুষগুলোও দেশের নাগরিক—তাদের অধিকার, চাহিদা ও স্বপ্নের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব অবিচ্ছেদ্য।

উন্নয়নের আলো যেন এই দুর্গম গ্রামেও পৌঁছে—এটাই এখন বটতলীর তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রত্যাশা।

মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, বটতলী গ্রামের তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ে ঘরে ঘরে সোলার জরুরি। আগামীতে সুযোগ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine
Google search engine
Google search engine

Recent Comments