রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে উপজেলার ধামাইপাড়া বৌদ্ধ বিহারে শুরু হয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের পিণ্ডদান ও প্রাতঃরাশ, মঙ্গল সূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সংঘ দান, ধর্মীয় দেশনা, প্রদীপ পূজা, হাজার বাতি দান ও ফানুস উড়ানোসহ নানা কর্মসূচি। সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়ানো শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (কীর্তন) পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বায়েজীদ-বিন-আখন্দ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও শান্তিকামী মানুষকে মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানান।
বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিটেন চাকমার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় হেডম্যান রিতেশ চাকমা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মৃদুল কান্তি চাকমা, স্থানীয় কাব্বারী আশুগোপাল চাকমা, রাজেশ চাকমা ও প্রবীন চাকমাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও হাজারো উপাসক-উপাসিকা।
অনুষ্ঠানে ধর্মদেশনা প্রদান করেন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু কলোদায় স্থবির। বিশেষ প্রার্থনায় পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস পালন শেষে প্রবারণা উৎসব উদযাপন করতেন।
সেই ঐতিহ্য ধরে আজও বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছেন। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকেই শুরু হয় এক মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব, যেখানে পুন্যার্থীরা পবিত্র বস্ত্র দান করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে জুরাছড়ি ইউনিয়নে ২১টি, বনযোগীছড়া ইউনিয়নে ৮টি, মৈদং ইউনিয়নে ১৩টি ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে ২৩ টি বৌদ্ধ বিহারে ৫০০ কেজি হারে ৬৫টি বিহারে ৩২ মেট্রিক্টটন ৫শ কেজি খাদ্যশস্য প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.মাসুদ রানা।