মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫
মূলপাতাঅপরাধখাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ইউপিডিএফের প্রতিবেদন প্রকাশ

খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ইউপিডিএফের প্রতিবেদন প্রকাশ

গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলাধীন মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল।

সোমবার সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক নিরন চাকমার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  এ প্রতিবেদনে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা হামলার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। হামলার জন্য স্থানীয় সামরিক প্রশাসন ও সেটলারদের দায়ি করা হয়।

প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে হামলা রোধে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

১। অবিলম্বে হামলাকারী সেনা-সেটলারদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদ¶েপ গ্রহণ করা এবং হামলায় নিহতদের যথাযথ ¶তিপূরণ প্রদান, আহতদের (গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে) সুচিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত  ক্ষতিপুরণ প্রদানসহ  স্থানে পুনর্বাসন করা।

২। উগ্রসাম্প্রদায়িক সেটলারদেরকে সেনাবাহিনীর মদতদান বন্ধ করা এবং সেটলারদেরকে সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকারগুলোর চালু করা পাহাড়ি বিদ্বেষী রাষ্ট্রীয় নীতি বাতিল করা।

৪। গুইমারা হামলার পরবর্তী যেভাবে মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলছে তা অতি দ্রুত বন্ধ করা।

৫। সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের শাস্তি প্রদান করা এবং হামলা থেকে পাহাড়িদের র¶া করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ ও গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সামসুদ্দিন রানাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা।

৬। জাতিসংঘকে জড়িত করে হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ” তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ সেপ্টেম্বর জুম্ম ছাত্র জনতার আহবানে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ি সদরের খেজুড় বাগান (উপজেলা পরিষদ) এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেটলাররা সেখানে একজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হন। আহতদের কয়েকজন হলেন দীঘিনালার বড়াদাম গ্রামের রিকন চাকমা ওরফে বারিজে (তিনি একজন পিকআপ চালক), খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা মারমা পাড়ার বাকুলু মারমা পিতার নাম থৈইরি মারমা এবং একই গ্রামের কালাইয়া মারমা পিতার নাম থুইহ্লা প্রু মারমা। এদের মধ্যে রিকন চাকমাকে সেটলাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বেলা ২টা থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরও মহাজন পাড়া ও ইয়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় পাহাড়িদের ওপর হামলা করা হয়।

ঐদিন সন্ধ্যার দিকে খাগড়াছড়ি বাজারের দ¶িণ পাশে য়ংড বৌদ্ধ বিহারে হামলার চেষ্টা করা হলে এলাকার জনগণ সেখানে জড়ো হয়। সেটলাররা বিহারের সামনে জড়ো হওয়া জনতার ওপর হামলা শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। সেনা পুলিশের উপস্থিতিতেই সেখানে সেটলাররা ৩ জন পাহাড়িকে (মারমা) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এরা হলেন- কুমিয়া ত্রিপুরা (২৫), মংসাঅং মারমা (২২) ও মংহ্লা মারমা। সেটলার বাঙালিরা সেখানে পাহাড়িদের দোকানপাটেও ভাঙচুর চালায়।

গুইমারা রামসু বাজারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে গুইমারা এলাকার ছাত্র জনতা রামসু বাজার এলাকায় টাউন হলের সামনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ পালন শুরু করে। তাদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালনকালেই সেনা-সেটলাররা হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর গুলিতে মারমা জাতিসত্তার ৩ জন পাহাড়ি নিহত হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখমসহ আহত হন অন্তত অর্ধশত পাহাড়ি।

অন্যদিকে সেটলাররা রামসু বাজারে গিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে বাজারের ১৫টি প্লটের ৫০টির অধিক দোকান, ১৫টি বসতবাড়ি, ১৬টি ভাড়াটিয়া বাসা, ১টি বেসরকারি অফিস, ১টি হলুদের গোডাউন (বাঙালির মালিকানাধীন), ১৭টি মোটর সাইকেল ও ১টি মাহিন্দ্র গাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরও করে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine
Google search engine
Google search engine

Recent Comments