বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫
মূলপাতাক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীগত বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জেএসএস

গত বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জেএসএস

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের গত এক ব্ছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহ তথ্য প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দলটি।

এতে বলা হয়, ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক সামগ্রিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। উপরন্তু পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম অধিকতর জোরদার হয়েছে।

২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে জুম্ম জনগণের উপর নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে এবং ডিসেম্বরে লামায় ত্রিপুরাদের ১৭টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

পূর্বের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর মতো উক্ত সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের কাউকেই আইনের আওতায় আনা হয়নি এবং উক্ত ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী এবং জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী রাষ্ট্রীয় নীতির কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

বিপরীতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জুম্ম জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘অবৈধ অস্ত্রধারী’ হিসেবে তকমা দিয়ে ক্রিমিনালাইজ করা, জুম্ম নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ চরম অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে।

২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা ২০০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এসব ঘটনায় ৬,০৫৫ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। এতে ২১ জনকে হত্যা এবং ১১৯টি বাড়ি ও দোকান অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়া বহিরাগত কোম্পানী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সেটেলার কর্তৃক ২,৩১৪ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে বলা হয় প্রতিবেদনে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে জেএসএস প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ৩০ এপ্রিল ২০২৪ জাতীয় সংসদ ভবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ৯ম সভা অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়া ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উক্ত সভায় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন এবং ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়টি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিষয় হস্তান্তর সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন, প্রত্যাহৃত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় এপিবিএন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, বান্দরবানে কেএনএফের তৎপরতা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এসব বিষয় বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি ঘটেনি।

ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাড়ে চার মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পক্ষান্তরে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন লঙ্ঘন করে পরিষদগুলোর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে সাময়িক কালের জন্য পরিষদগুলোর প্রশাসক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের সময় বহিরাগত সেটেলারদেরকে অন্তর্বর্তী পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, যা ছিল পার্বত্য চুক্তির সরাসরি বরখেলাপ।

ভূমি বেদখল, উচ্ছেদ ও অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০২৪ সালে মুসলিম সেটেলার ও ভূমিদস্যু কর্তৃক ২৫টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ২১০ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে, ১১৯টি বাড়ি, দোকান ও বুদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে এবং ২,৩১৪ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে। আলিকদমে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

২০২৪ সালে মুসলিম সেটেলার কর্তৃক জুম্ম নারী ও শিশুর উপর ১২টি সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ১৬ জন জুম্ম নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine

Recent Comments