বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২১, ২০২৫
মূলপাতাপর্যটনঅমর ভালবাসার নিদর্শন রাঙামাটির লাভ লক পয়েন্ট

অমর ভালবাসার নিদর্শন রাঙামাটির লাভ লক পয়েন্ট

বিডিআর, বর্তমানে বিজিবিতে চাকরী করতেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নাগির পাড় গ্রামের আলাউদ্দিন পাটোয়ারী।

বিডিআরে চাকুরীরত অবস্থায়  ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান আলাউদ্দিন।

২০১৩ সালে দেশে এসে একই উপজেলার পয়লা গাছা গ্রামের আইরিন সুলতানা লিমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আলাউদ্দিন। বিয়ের দুই মাস পর লিমাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আমেরিকায় চলে যান আলাউদ্দিন। আমেরিকায় সব ঠিকঠাক করে ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ীতে স্ত্রী লিমাকে নিতে দেশে আসেন আলাউদ্দিন। বিমানের ফিরতি টিকিট কাটেন আলাউদ্দিন। স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকার উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার দিন নির্ধারণ হয় ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল। সব ঠিক।  আলাউদ্দিন লিমা সিদ্ধান্ত নেন আমেরিকা যাওয়ার আগে পাহাড়ের প্রকৃতি দেখবেন। কাপ্তাই হ্রদের নৌ ভ্রমণ করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ মার্চ আলাউদ্দিন ও লিমা বেড়াতে আসেন রাঙামাটিতে। উঠেন রাঙামাটি পর্যটন মোটেলে।  ১৯ মার্চ সব ঠিক ছিল। আকাশ পরিস্কার ছিল।

তাই দুপুরে ইঞ্জিন চালিত দেশীয় নৌকা নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণে বের হন স্বামী স্ত্রী।  নৌকা ভাড়া করেন ঝুলন্ত সেতু ঘাট থেকে।  আলাউদ্দিন ও লিমাকে নিয়ে বোট রওনা দেয় সুবলংয়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কে জানত কাপ্তাই হ্রদের মাঝে কাল বৈশাখী হানা দেবে! লিমাদের বহনকারী বোটটি যখন ডিসি বাংলোর দক্ষিণ দিকে কাপ্তাই হ্রদের মাঝ বরাবর চলে আসে তখন হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হানা দেয় কাল বৈশাখী।  বাতাসে তোড়ে উল্টে যায় নৌকা। আলাউদ্দিন সাঁতার জানলেও জানত না লিমা। তাই বাঁচার জন্য স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন লিমা। আলাউদ্দিন স্ত্রীকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। নৌকা উল্টানোর দৃশ্য দেখে দম্পতিকে উদ্ধারের জন্য ঝুলন্ত সেতুর ঘাট থেকে  বোট নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অন্য বোট চালকরা।  তারা পৌঁছার আগে আলাউদ্দিন লিমা হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়।

শুরু হয় খোঁজাখুজি। তাদের উদ্ধারে যোগ দেয় কাপ্তাই নৌবাহিনী রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। দুইদিনেই তাদেঁর সন্ধান পায়নি ডুবুরিরা।

ঘটনার তিন দিন পর ২২ মার্চ সকালে পলওয়েল পার্কের কাপ্তাই হ্রদের পাড় থেকে কয়েকগজ দুরে একে অপরকে আলিঙ্গন অবস্থায় পানিতে ভেসে উঠেন আলাউদ্দিন ও লিমা। এ দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে কাপ্তাই হ্রদের বাতাস। স্ত্রীর জীবন রক্ষায় স্বার্থপরতা দেখাননি আলাউদ্দিন। স্ত্রীর সঙ্গে পানিতে জীবন দেন আলাউদ্দিন।  দম্পতির এমন ভালবাসা দেখে সেদিন কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

স্বামী স্ত্রীর এমনভাবে বাঁচার চেষ্টা এবং মর্মান্তিক মৃত্যু একটি বিরল ঘটনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালোবাসার স্মারক থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

তাদের ভালোবাসাসহ পৃথিবীর সকল ভালোবাসার মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০১৮ সালে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার উদ্যোগে উন্নয়ন বোর্ড  পলওয়েল পার্কে নির্মাণ করে লাভ লক পয়েন্ট।

সেদিন লাভ পয়েন্ট উদ্বোধনের পর নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ও তার সহধর্মিনী অনামিকা ত্রিপুরা লাভ পয়েন্টে তালা লাগিয়ে চাবি কাপ্তাই লেকের পানিতে ছুড়ে ফেলে ‘লাভপয়েন্ট’ এর ‘লাভ লক’ কার্যক্রমের সূচনা করেন।

নিহত দম্পতির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পাশাপাশি পৃথিবীর সব ভালোবাসাকে অমরত্ব দিতে দেয় যুগল ও প্রেমিক প্রেমিকারা এ লাভ লক পয়েন্টে তালা ঝুলিয়ে তালার চাবি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফেলে প্রতিজ্ঞা করে অমর ভালবাসার।

 

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine
Google search engine
Google search engine

Recent Comments