রাঙামাটির বিলাইছড়ি ফারুয়া ইউনিয়নের যমুনাছড়ি বম পাড়া। দেশীয় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে রেইংখং নদী পথে ফারুয়া বাজার থেকে যমুনাছড়ির পর্যন্ত প্রায় ১ ঘন্টা। নৌ পথের দুরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
বিলাইছড়ি সদর উপজেলা এবং ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে যমুনাছড়ি বম পাড়া পর্যন্ত নেই নেই সড়ক যোগাযোগ, মোবাইলে কথা বলার জন্য নেই নেটওয়ার্ক। নেই বিদ্যুৎ। নেই সুপেয় পানি ব্যবস্থা। রেইংখং নদী থেকে পানি পান করেন যমুনাছড়ি পাড়ার বমরা।
১২০ পরিবারের এ পাড়ার মানুষের জুম চাষেই ভরসা । খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী বম জনগোষ্ঠীরর লোকজন সরকারী গুরত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয় হেডম্যান পালম বম বলেন, ১৯৮০ সনে সাইচল এলাকা হতে এই যমুনাছড়িতে তারা বসতি স্থাপন করে। এ গ্রামে নেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে।
গ্রামের রবার্ট বম বলেন, আমাদের গ্রামে সরকারী উন্নয়ন পৌছায় না। জুম চাষে একমাত্র ভরসা। জুমে ধান, আদা, হলুদ,কলা, মারফা ও অন্যান্য সবজি ফলন যা হয় তা বিক্রয় করে কোনো উপায়ে চলি। এখন জুমেও আগের মতো ফলন হয় না। তাছাড়া ফরেস্ট এলাকা জুম চাষ করতে গেলেও অনুমোদন লাগে। অনেক দুরে গিয়ে জুম চাষ করতে হচ্ছে। প্রায় ১ দিনের পথ।
রবার্ট বম আরো বলেন. যোগাযোগের জন্য একমাত্র পথ হলো কাঁচা রাস্তায় পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং আঁকাবাঁকা পথে চলা।
বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়ন সদর ফারুয়া বাজার হতে ৩ মাস পর্যন্ত বোটে যেতে পারে। শুকনো মৌসুমে হেঁটে আসা- যাওয় করতে হয়। এজন্য বাজারে মারফা, চিনাল, তিল, কুমড়া,কলা,আদা হলুদ,মরিচসহ ইত্যাদি ফলমূল ও অন্যান্য সবজি বিক্রয় করতে হলে প্রায় তেরো – চৌদ্দ কিলোমিটার কাঁধে করে নিয়ে বিক্রয়ের জন্য বাজারে আসতে হয়। যা আসা – যাওয়ার জন্য প্রায় ১ দিন সময় লাগে।
যমুনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারেম বম বলেন ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত করা হলে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিলাইছড়ি সেনা জোনের সহায়তায় চলে বিদ্যালয়টি । ২০০৮ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা “টংগ্যা” পরিচালনা করে। এরপর থেকে অভিভাবক ও পাড়াবাসী পরিচালনা করে আসছে। বেতন দিতে পারেনা যা আমরা মানবেত জীবন- যাপন করছি। ৬০ হাজার টাকা বকেয়া বেতন এখনো পায়নি। জাতীয়করণের জন্য কাগজ পত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ আশায় রয়েছি।
হেডম্যান পালম বম বলেন, এই এলাকায় সরকারিভাবে তেমন উন্নয়ন বলতে নেই, তিনি আরো দুংখ করে বলেন,বিভিন্ন পাড়া সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ করা হলেও আমাদের গ্রামে যাওয়ার জন্য সড়ক করা হয়নি। সীমান্ত সড়ক থেকে আমাদের গ্রামের দুরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার হবে। আমাদের গ্রামটি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে আমরা চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। যদি সড়ক নির্মাণ করে দেয়া হয় তাহলে আমাদের উপকার হবে।
ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তারাছড়ি হতে তাংকইতাং যাওয়ার রাস্তা মাঝখানে যমুনাছড়ি বম পাড়ার সংযোগে কাঁচা পাহাড়ী ঢালু রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ২-২.৫ কিলোমিটার হবে।
এই রাস্তাটি খাড়া পাহাড়ী ঢালু রাস্তা হওয়াতে রাস্তাটি পাকা করা গেলে এবং যমুনাছড়ি ছড়ার উপরে ৪০-৫০ মিটারের সেতু নির্মাণ করা গেলে যমুনাছড়ি বম পাড়ায় সরাসরি গাড়ি যেতে পারবে এবং এতে গ্রামবাসীরা যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। তবে এর সাথে তারাছড়ি হতে তাংকইতাং পাড়ায় যাওয়ার রাস্তাটিও পাকা করা গেলে সেক্ষেত্রে সারা বছর গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মামুনুল হক জানান, উন্নয়নের জন্য আমি এখানে রয়েছি,উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। এলাকার জনপ্রতিনিধি’র সঙ্গে কথা বলবো। প্রয়োজনে যাবো দেখবো। তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জেনে তারপরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ শিক্ষা ও সুপেয় পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।