গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অনিক কুমার চাকমাকে হত্যার নেতৃত্ব দেয়া ইসরাত হাসান শুভকে গত এক বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ইসরাত হোসেন সে সময় ছিল রাঙামাটি শহরের চম্পক নগরের মুখে এ জে আর কুরিয়ারে কর্মচারী। বর্তমানে ইসরাত পলাতক।
গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলায় রাঙামাটি শহরের দক্ষিণ কালিন্দপুরের মুখে একদল বাঙালী যুবক প্রকাশ্য রড লাঠিসোটা ইট দিয়ে আঘাত করে অনিক কুমার চাকমাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পুলিশের তদন্ত বলছে, ঘটনার দিন সে দক্ষিণ কালিন্দীপুরে মূখে অনিক চাকমাকে পিটিয়ে হত্যা নেতৃত্ব দেয়াদের একজন ছিল ইসরাত হোসেন।
এ পর্যন্ত পুলিশ মো মামুন, মো আবরার. মো ফিরোজ হোসাইন, মো জালাল হোসেন এবং মো জাহাঙ্গীর আলম নামে ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে মো মামুন ছাড়া বাকী আসামীগুলো জামিনে আছে।
এ মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে এবং আসামীরা কবে সাজা পাবে এ আশায় দিন পার করছেন অনিকের পরিবার।
অনিকের বাবা আদর সেন চাকমা বলেন, আমি ঘটনার পরদিন আমার ছেলের লাশ আনতে রাঙামাটি হাসপাতালে যাই।
সেখান থেকে থানা গিয়ে পুলিশের লেখা এজাহার স্বাক্ষর করি। স্বাক্ষরের আগে আমাকে এজাহার পড়ে শুনানো হয়। এর প্রায় ১ সপ্তাহ পর আমার স্ত্রী তারা সুন্দরী চাকমা ছেলের হত্যার সাথে জড়িতদের তালিকা নিয়ে রাঙামাটি আদালতে একটি মামলা করেছি। এরপর কি হলো আমরা জানি না।
আমি এবং আমার স্ত্রী এখানো ছেলে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অনিকের মা আগের ঘরটি দেখলে কান্না করে। তাই আগের ঘরটি ভেঙে ফেলে নতুন আরেক জায়গায় একটি ঘর করেছি। বর্তমানে সেখানে আছি।
ঘটনার পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ১ লাখ টাকা, জেলা পরিষদ ৩ লাখ টাকা, পার্বত্য মন্ত্রনালয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা সহযোগীতা দিয়েছে।
রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল আদালত সূত্র জানায়, গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর অনিকের মা তারা সুন্দরী চাকমা রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
যেখানে আসামী করা হয় রাঙামাটি শহরের বাস টার্মনিাল সংলগ্ন শান্তি নগর এলাকার মো জাহাঙ্গীর (২৮), চম্পক নগর এলাকার মো সাইফুল(৩০), এ জে আর কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী ইসরাত হাসান শুভ (২৬) চম্পক নগর এলাকার মো ইসমাইল (৩০), চম্পক নগরের বাসিন্দা সিএনজি চালক মো. কামাল (৩০), একি এলাকার সিএনজি চালক মো ইয়াসিন (৩০), চম্পক নগর গাত্তো পাড়ার মো মান্নান মিস্ট্রি (২৮), দক্ষিণ কালিন্দীপুরের পান দোকানদার মো. রাকিব (২৮), রাঙামাটি হাসপাতাল এলাকার মো বুজ্যা (২৬)।
আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত এ মামলার উপাদানগুলোকে ভিত্তি করে কোতয়ালী থানার দায়ের করা মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী রাজীব চাকমা বলেন, আমরা যাদের আসামী করে আদালতে মামলা উত্থাপন করেছি তার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ও ছবি উত্থাপন করেছি। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ মামলাকেও ভিত্তি করে এ অনিকের বাবার করা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এ মামলায় গত এক বছরে ৫ আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৪ জন জামিনে আছে। এ ৫ আসামীর মধ্যে এক আসামীর নাম আমাদের মামলায় উল্লেখ আছে।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায় এ মামলায় পুলিশ মো মামুন, মো আবরার, মো জালাল হোসাইন, মো ফিরোজ হোসাইন এবং জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে আদালতে তুলে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ৫ জনের মধ্যে মামুন ছাড়া বাকীরা জামিনে আছে।
বিষয়টি সত্যতা স্বীকার কার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার এসআই আলী হোছাইন বলেন, আমি শুরু থেকে এ মামলার তদন্ত কাজ করেছি। আদালতের মামলার বিবরণীর তথ্য, সিসি টিভির ফুটেজ, আসামীদের স্বীকারোক্তি সব মিলিয়ে মামলার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীদের ঘটনার সময়কায় ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত একজন আসামীকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আলী হোছাইন বলেন, গত এক বছরে মামলার বাদীকে একাধিকবার থানায় আসতে বলেছি।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছি কিন্তু কেউ আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। রাঙামাটির বাইরে খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম থেকে আমি আসামী ধরেছি। এদের জবানবন্ধীও গ্রহণ করেছি। সবকিছু মিলে মামলার তদন্ত কাজ অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বাদী ও স্বাক্ষী আসলে তাদের সাথে কথা বলে আরো কিছু তথ্যর সত্যতা নিশ্চিত করে আমি চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উত্থাপন করতে পারব।
প্রসঙ্গত গত বছর খাগড়াছড়ি শহরে মামুন নামে এক মোটর সাইকেল চোর গণপিটুনীতে নিহত হবার জেরে ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে মধুপুর ও দিঘিনালায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাঙালীরা হামলা অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাঙামাটি বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র ব্যনারে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলকে কেন্দ্র করে বনরুপা মসজিদে হয়েছে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করা হয়। এতে বনরুপা বাজারে হামলা, আঞ্চলিক পরিষদে আগুন দেয়া হয়। এরপর পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। নিহত হয় অনিক কুমার চাকমা নামে এক কলেজ ছাত্র। সরকারী অফিস বাড়ি দোকান ব্যাংক সহ দেড় শতাধিক স্থাপনা ক্ষতি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে প্রথমে ১৪৪ ধারা পরে কারফিউ জারী করে জেলা প্রশাসন।
এ ঘটনা আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি কোতোয়ালি পুলিশ, অনিক কুমারের মা ও বাবা আদালত ও থানায় পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করে।