রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কৃষকেরা চাষ করেছে বিভিন্ন জাতের শিম ও সবজি। উপজেলা থেকে ফারুয়া নৌ-পথে যাওয়া সময় রাইংখ্যং খালের দুই-ধারে নিজ ও পতিত জমিতে শত শত একর জায়গায় চাষ করেছে এইসব শিম। তবে চাষ করেছে ধান এবং অন্যান্য সবজিও।
সবুজ ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছে এখানকার কৃষকেরা। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছে শীতকালীন শিম।প্রতিবছর চাষ করলেও এবছরে চাষ করেছে আনাচে – কানাচে প্রায় সব জায়গাতেই। অনেকে বলছেন শিমচাষে ভাগ্য বদলে দিতে পারে এখানকার মানুষের।খুঁটির মধ্যে বেঁধে দিয়ে সে-ই খুঁটি প্যাচিয়ে ঝোঁপঝাড় হয়ে সেই ঝোঁপে অনেক শিম ধরে।
উপজেলার ৪ ইউনিয়নের মধ্যে বিলাইছড়ি ও ফারুয়া ইউনিয়নে বেশি লক্ষ্যণীয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ফারুয়া ইউনিয়নে। পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
বিলাইছড়ি ইউনিয়নে চাষ হয়েছে কুতুবদিয়া, বহলতলী, সাক্রাছড়ি, তিনকুনিয়া, মালুম্য এবং পাংখোয়া পাড়ার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায়। আর ফারুয়া ইউনিয়নে চাষ করেছে চাইন্দা,উলুছড়ি,তক্তানালা,গো- ছড়া, চ-ছড়ি,ফু-ছড়া, রোয়াপাড়া ছড়া, আমকাটাছড়া, ওরাছড়ি,আবইমারা, যামুছড়া,লিত্তিছড়ি, গোয়াইনছড়ি, এগুজ্যাছড়ি, তারাছড়ি,যমুনা ছড়ি, শুক্কুরছড়ি উপরে এলাকা সহ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাতে। কৃষকরা বলছেন গত বছরের তুলনায় এবারে বেশি ফলন ঘরে তুলবে ।
ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান,আজ থেকে ২০ বছর আগে এই জায়গাগুলো যেদিকে তাকাই না কেন দুকুল জুড়ে শুধু নল খাগড়া আর নল খাগড়া । পরে তামাক কোম্পানিরা খাগড়া ধ্বংস করে তামাক চাষ করতো।এর পরে তামাক চাষকে নিশেষ ও নিরুৎসাহিত করা হলে তামাকের পরিবর্তে মানুষেরা কিছু কিছু এ-ই শিম ও অন্যান্য সবজি চাষ করতো।
তিনি আরও জানান,পর্যায়ক্রমে এই শিমের বিচি বা বীজগুলো বেশ বাজার জাত ও বিক্রয়ে চাহিদা এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় দিনদিন চাষে আগ্রহ বেড়েছে ।প্রতিবছর করলেও এবছরে ব্যাপকভাবে চাষ করেছে । তাছাড়া গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ-ই ফারুয়া ইউনিয়ন। বন্যা’র ফলে জমিগুলোতে পলি পড়েছে। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসব চাষে মনোযোগ দিয়েছে। এছাড়াও এই এলাকা সাধারণ মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে শিম চাষ।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বিভূতি ভুষন চাকমা এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন গুপ্ত জানান, উপজেলায় ২০২৩ সালে জুম সিজনে ধান,সবজি, ভুট্টা সহ চাষ করেছে ১৯৪৭ হেক্টর। বর্ষা সিজনে আমন ধান সবজিসহ চাষ করেছে ১৭২ হেক্টর। রবি মৌসুমে গীল শিম ৭৪, ফরাস শিম ৩০ চিনাবাদাম ৬৪, বরো ধান ২৭২, ভুট্টা ২৬ হেক্টরসহ সব মিলিয়ে চাষ করেছে ৬৯২ হেক্টর। আর, ২০২৪ সালে জুম সিজনে আউশ ধান চাষ করেছে ১৬৩৪, সবজি ২১২, ভুট্টা ২৪ হেক্টর, মোট ১৮৭০ হেক্টর জমিতে। আমন/ বর্ষা সিজনে আমন ধান ১৫২,সবজি ২২ হেক্টরসহ মোট ১৭৪ হেক্টরে। রবি (শীত/বরো) মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধান ২৭৭, গীল শিম ৭৫, চিনাবাদাম ৬৫,সবজি ২২৬,ফরাস শিম ৩০, ভুট্টা ২৬,সবজি ২২৬ হেক্টর মোট ৯২৫ হেক্টর জমি।
কৃষিপ্রধান উপজেলা হিসেবে দুর্গম এলাকায় কম জনবল দিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা খুবই কঠিন।এর পরেও প্রতিনিয়ত মাঠে কৃষকদের পারামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য জনবল অবশ্যই প্রয়োজন।