মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫
মূলপাতাঅপরাধজুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভবন নির্মাণে অনিশ্চয়তা

জুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভবন নির্মাণে অনিশ্চয়তা

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় বহুল প্রত্যাশিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

২০২৩ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পান বান্দরবানের ঠিকাদার ইউটি মং।

তবে প্রকল্পের বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন জৈনক ঠিকাদার সলিম উল্লাহ সেলিম। শর্ত অনুযায়ী গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি।

জানায়, প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল বাবদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা জানান, বিল উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর দাবি, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও অন্তত নিচতলাটি চালু করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের চারতলার ছাদ ঢালাই ও নিচতলার কিছু দেয়ালের কাজ হলেও সীমানা প্রাচীর, রাস্তা বা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়নি। প্লাস্টার না করায় বিম ও গাঁথুনি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসক ও রোগীদের সংকটাপন্ন পরিবেশে জরাজীর্ণ টিনশেড কক্ষে সেবা নিতে হচ্ছে।  এতে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জুরাছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অনিল বরণ চাকমা অভিযোগ করে বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতির কারণেই জুরাছড়িবাসী দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের কারণে আজও শেষ হয়নি। এতে স্থানীয় জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অবহেলা ও দুর্নীতির বলি হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে নির্মাণকাজ পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদার সলিম উল্লাহ সেলিম দাবি করেন, “আমার কোনো গাফিলতি নেই। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজের সময় ক্ষেপন হয়েছে ।

জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা ও বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা জানান, উপজেলাবাসীর চিকিৎসা ভরসার একমাত্র স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি।

ভবন নির্মাণ কাজ পুনঃ চালু করে দ্রুত সম্পাদনের দাবি জানান তারাও। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি কুমার শর্মা বলেন, “কার্যাদেশের সময় ছিল ১০ মাস, তবে এ ধরনের ভবন নির্মাণে দুই বছর লাগে। জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে।

ডিপিডি প্রণয়ন শেষে অনুমোদন পেলে সেপ্টেম্বর থেকে কাজ আবার শুরু হতে পারে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।” তবে প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা ও অচলাবস্থায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাঁদের আশঙ্কা, স্বাস্থ্যসেবার এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রাজনৈতিক জটিলতা ও প্রশাসনিক গড়িমসির কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine
Google search engine
Google search engine

Recent Comments