শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫
মূলপাতাপ্রধান খবরজুরাছড়িতে তাপদহে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে পানির সংকট

জুরাছড়িতে তাপদহে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে পানির সংকট

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানি থেকে নিত্য ব্যবহার্য পানিও মিলছে না।

তাপদাহে এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, ঝর্ণা, নালার পানি। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কষ্ট বহু গুণ বেড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে এর দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কুকিছড়া, ত্রিপুরাপাড়া, জনতাপাড়া, বারুদগলা, সোহেল পাড়াগুলো ।

এসব গ্রামে ২৪৭ পরিবারের বাস। তাদের পেশা কৃষিকাজ (জুম চাষ)। নেই বিদ্যুৎও। চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ওয়ার্ডে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাকলেও নেই কোন নিরাপদ পানি জন্য নলকূপ। এসব গ্রামের পাদদেশে মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পানছড়ি ছড়া।

এই ছড়ার ছোট ছোট প্রশাখা ছড়া। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মরা ছড়ায় পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মে গ্রামের লোকজনের একমাত্র ভরসা কুয়ার পানি। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়ার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানায়, পাড়াগুলো পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় পাড়া থেকে প্রায় ৫-৮শ ফুট নিচে নামলে ছোট ঝিরি বা ঝরনার দেখা মেলে। ঝিরিগুলোতে পানি নেই বললেই চলে।

তবুও এর ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে তাদের। তারা বলছেন, আগের মতো বড় বড় গাছ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ছোট ছোট ঝিরি-ঝরনাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য অরুন চাকমা বলেন প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ে মানুষের জীবনযাপনে অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে পানি সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।’ কুকিছড়া, সোহেল পাড়া কার্বারী কিরণ জয় চাকমা বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই আমাদের এলাকায় মানুষদের খাবারের চাইতে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছায়। আমাদের নারীরা প্রতিদিন পাড়া থেকে কয়েক শ ফুট নিচে নেমে খাবার পানি, গৃহস্থালি কাজের ও রান্নার পানি সংগ্রহ করেন।’ স্থানীয় মল্কা বানু চাকমা, রঞ্জিতা চাকমা বলেন,’গ্রীষ্মকাল এলে আমাদের গোসলের কথা ভুলে যেতে হয়। দুই-তিন দিন পর গোসল করতে পারি। তাও আবার এক-দুই লিটার পানি দিয়েই গোসল সারতে হয়। শুধু জুরাছড়ি ইউনিয়নে নয়, নিরাপদ পানি সংকট বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশ পাড়া, ছোট পানছড়ি, এরাইছড়ি।

মৈদং ইউনিয়নের আমতলা বাদলহাটছড়া, জামুরাছড়ি, কাঁঠাল তুলি। দুমদুম্যা ইউনিয়নে করল্যাছড়ি, দুলুছড়ি, শিমাইতুলি ও তেছড়িতে প্রকট ভাবে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

উন্নয়ন কর্মী পলাশ খীসা বলেন, এ সব গ্রামগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে নিরাপদ পানির সংকটের পাশাপাশি কৃষি খাদ্য উপর ব্যপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। তীব্র গরম ও পানির সংকটে গবাদিপশুর মৃত্যুও বাড়ছে। তিনি বলেন ঝিড়ি ছড়াগুলো রক্ষায় সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসব ছড়া ঝিড়ির চার পাশে সবুজ পাহাড়ি বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী।

জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ৫নং ওয়ার্ডে বছরে গ্রীষ্ম কাল এলেই পানির সংকট দেখা দেয়। এতে দেখা যায় এলাকায় পানিবাহিত রোগেও প্রভাব বিস্তার করে।

তিনি আরো জানান চাহিদার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত গাছ-গাছালি কেটে ফেলা, বানিজ্যিক সেগুন চাষে পানির নাব্যতা দিন দিন নামিয়ে দিচ্ছে। পানি সংকট নিরোসনে জনস্বার্থ প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন দপ্তরে গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস), সৌর বিদ্যুৎ মাধ্যমে পাথ কোয়া থেকে পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রস্তাব পাটানো হলেও বাস্তবায়নের কোন বাস্তবায়নের আগ্রহ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গুলোর এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

উপজেলা উপসহকারি জনস্বার্থ প্রকৌশলী রকি দে পানির সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, দুর্গমতার কারণে এসব এলাকায় পরিবহনে অতিরিক্ত খরচের ফলে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। তবে জনস্বার্থ প্রকৌশ বিভাগ থেকে রিং ওয়েল ও গ্রেভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine

Recent Comments