বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫
মূলপাতাপার্বত্য চট্টগ্রামসাজেকে পৌছেনি ত্রান; দেখা মিলেনি সরকারী কোন কর্মকর্তার

সাজেকে পৌছেনি ত্রান; দেখা মিলেনি সরকারী কোন কর্মকর্তার

আগুনে পুড়ে যাওয়ার ১ দিন পার হলেও ত্রান পৌছেনি সাজেকে। মানবেতর দিন পার করছে ক্ষতিগ্রস্তরা। দুর্গতদের খোঁজ নিতে সরকার কিংবা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার সাজেকে দেখা যায়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা ও লুসাই জনগোষ্ঠীর লোকজনকে খাবার দিচ্ছে সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতি। বুধবার দুপুর ১ টায় আগুন লাগে সাজেকের রুইলুই এলাকায়। সর্বশেষ রিসোর্ট, বসত, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ ৯৫টি স্থাপনা পুড়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ন দেব বর্মন। তবে এ রিপোর্ট এখনো চুড়ান্ত নয় জানিয়েছেন সুপর্ন। আরো কেউ বাদ পড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সুপর্ণ দেব বর্মন বলেন, রিসোর্ট দোকান, রেস্টুরেন্টের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা লুসাইদের মানবেতর দিকটিবে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। কারণ এরা সব কিছু হারিয়েছে। এদের না দেখলে এদের খোলা আকাশে জীবন যাপন করতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা লুসাইদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ পরিবারের জন্য তাবু দেয়া হয়েছে। আগামীকাল জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ আসার কথা বলা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মঞ্জুরী ত্রিপুরা, করি ত্রিপুরা, বাদল ত্রিপুরা, জেমা লুসাই, রোয়াটি লুসাই সবাই একই কথা বলেন। বলেন, আগুনে সব পুড়ে গেছে কোন কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় কোন রকম জীবন নিয়ে বের হতে পেরেছেন। এখন পর্যন্ত কারোর কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি বলেন তারা।

তদন্ত কমিটি গঠন

সোমবার অগ্নিকান্ডের ঘটনায়  অগ্নিকান্ড উৎস ও কারণ জানতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ৫ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) কে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য ৪ সদস্য হলেন, বাঘাইছড়ি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক, দিঘিনালা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সোমবার সন্ধ্যায় এ তদন্ত কমিটি গঠনের পরও সাজেক যেতে পারেনি কমিটি।

পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার:

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মিডিয়া উইং সহকারী কমিশনার ইমতিয়াজ ইয়াসিন  এক বার্তায় জানায় সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পর্যটন অগ্নিকান্ড নিয়ে মঙ্গলবার একটি জুম মিটিং করা হয়েছে জানানো হয় মিডিয়া বার্তায়।

সাজেক অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে আজ বুধবার সাজেক সফর করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদারও আজ সাজেক সফর করবেন। এ কথা জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান।

ফায়ার সার্ভিসের বান্দরবান অঞ্চলের সহকারী পরিচালক পুর্ন চন্দ্র মুৎসুদি বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো তারা নিশ্চিত হয়নি। আমরা ধারণা করছি বিদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হয়েছে।

পানির সংকট, অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরির কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়েছে।আশেপাশে কোথাও পানি ছিল না। ফলে একবার নেয়া পানি দিয়ে যতটুকু পারা যায় নেভানোর চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া সাজেক পাহাড়টি উচু হওয়ায় গাড়িতে ধারণ ক্ষমতার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়েও কম পানি নিতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ইকো ভ্যালীতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ৯৪ স্থাপনা। পুড়ে যাওয়া স্থাপনার মধ্যে রিসোর্ট ৩২ টি, বসত বাড়ি ৩৫টি, দোকান ২০ টি এবং রেস্টুরেন্ট ৭টি। পুড়ে যাওয়া ৩৫ বসতের মধ্যে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ১৯টি, লুসাই জনগোষ্ঠীর। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে  এ অগ্নিকান্ডে ১২০/১৪০ টির বেশি রিসোর্ট। সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রথমে ইকো ভ্যালী রিসোর্টে আগুন দেখা যায়। এ আগুন পাশে অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়লে পরে সাজেক অবকাশ রিসোর্টসহ আরো বাকী রিসোর্টগুলোতে একের পর এক আগুন লাগে। আগুন লাগার সাথে সাথে স্থানীয় লোকজন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। তবে তারা সম্পূর্ন ব্যর্থ হন।
আগুনের খবর পেয়ে বাঘাইছড়ি, দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি, পানছড়ি, রাঙামাটিসহ নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন থেকে ১১টি ইউনিট সাজেক ভ্যালীতে আগুন নেভাতে আসে। পরে বিকাল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine

Recent Comments