রাঙামাটির লংগদুর বগাচতর ইউনিয়নে চিবারেগা এলাকায় অচিন্ত চাকমা (৩০)। গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মিত ও পরিচালিত চিবেরেগা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন অচিন্ত চাকমা। ৯ মাসে আগে বিবাহ করেন দয়া লতা (২৩) চাকমাকে।
গত দুই মাস আগে দয়া লতা চাকমার গর্ভে প্রথম বাচ্চা জন্মে। খুশীতে আত্মহারা অচিন্ত ও দয়া লতা।
একদিন অচিন্ত লক্ষ্য করেন স্ত্রীর পেট অস্বাভাবিক বাড়ছে। পরে ব্যাথা অনুভব হতে থাকলে আগস্টে প্রথম সপ্তাহে রাঙামাটিতে এক গাইনী ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলে আল্ট্রাসনোগ্রামে পেটে টিউমার ধরা পড়ে।
রাঙামাটিতে এ চিকিৎসা নেই বলে তাদের চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেন ঐ ডাক্তার। অচিন্ত স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামে গেলে সেখানকার আরেকজন গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিলে সে ডাক্তার অপারেশনের পরামর্শ দেন। খরচ নির্ধারণ করে দেন প্রায় দেড় লাখ।
চিন্তায় পড়ে যান অচিন্ত। অর্থ জোগাড় করতে আর আত্মীয় স্বজনের পরামর্শ নিতে স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে চলে আসেন রাঙামাটিতে।
স্মরণাপন্ন হন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী কনসাল্টেন ডাক্তার তাহমিনা দেওয়ানের।
সিদ্ধান্ত দিলেন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এর অপারেশন হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৮ আগষ্ট রোগীর সফল অপারেশন করেন ডাক্তার তাহমিনা দেওয়ান। পেট থেকে বের করে দেন তিন কেজি ওজনের টিউমার। রোগী এখন শংকামুক্ত। ২৬ আগস্ট সকালে লংগদুর বাড়িতে চলে গেছে দম্পতি।
ডাক্তার তাহমিনা বলেন, ২৩ বছর বয়সী রোগীর ডিম্বাশয়ে টিউমারটি বাসা বেধেছিল। রোগীর পেটে দু মাসের বাচ্চা রয়েছে। রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বাড়িতে চলে গেছে। রোগীর পেটের বাচ্চাটি সুস্থ আছে। ফলো আপ করতে বলেছি। এ ধরণের রোগ সাধারণত দেখা যায় না। এটি ব্যাতিক্রম। রাঙামাটি হাসপাতালে এ রোগীর অপারেশন হয়েছে এটি বড় ব্যাপার বলতে হবে।
রোগীর স্বামী অচিন্ত চাকমা বলেন, আমি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তাহমিনা মেডাম আমার চিন্তা দুর করেছে। চিকিৎসা করতে অপারেশন সরঞ্জান বাইরের কিছু ঔষধ সব কিছু মিলে আমার ১৫ হাজার মত টাকা খরচ হয়েছে। যারা এ অপারেশন করেছে পুরো টিমসহ রাঙামাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমার চিন্তা দূর করেছে। অর্থ অভাবে স্ত্রীর অপারেশন আরো হয়ত দেরী হত।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার শওকত আকবর খান বলেন, আমাদরে হাসপাতালের বাস্তবতায় এটি একটি জটিল অপারেশন ছিল। এ ধরণের অপারেশন সাধারণত রাঙামাটিতে হয় না। তবে রোগীর বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সফল অপারেশন হয়েছে। নির্মাণাধীন ১১ তলা হাসপাতালের কাজ শেষ হলে পুর্ণাঙ্গ জনবল এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলে রাঙামাটির রোগীরা আরো উন্নত সেবা পাবে।