শুক্রবার, জুলাই ৪, ২০২৫
মূলপাতাঅপরাধকলাপাতা থেকে মাশরুম উৎপাদন দেখিয়ে দাতা সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করছে উইভ!

কলাপাতা থেকে মাশরুম উৎপাদন দেখিয়ে দাতা সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করছে উইভ!

সার্বক্ষনিক ও লাভজনক পদে থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করছেন নাইউ প্রু মারমা মেরী। এসব বিষয়ে দুদক রাঙামাটি কার্যালয়ে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে।

গত বছর নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ গঠন হলে সেখানে সদস্য মনোনীত করা হয় নাইউ প্রু মারমা মেরীকে।
জেলা পরিষদের আইনে বলা আছে সার্ক্ষনিক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন এবং আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন এমন কোন ব্যাক্তি জেলা পরিষদে সদস্য হবার যোগ্যতা হারাবেন।
এ ধারা ভঙ্গ করার পাশাপাশি উইমেন্স এডুকেশন ফর এডভান্সেমন্ট এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট (উইভ) প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশী দাতা সংস্থার দেওয়া অর্থ আর্থসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে মেরীর বিরুদ্ধে। মেরী বর্তমানেও উইভের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে আমেরিকার দাতা সংস্থা আরএসএফ সোসিয়েল উইভবে কলা গাছের আঁশ দিয়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের সেনেটারী প্যাড উৎপাদন এবং কলাগাছের পাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদনের জন্য উইভকে ৩৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প দেয়। যেটি শেষ হবে চলতি বছর আগস্টে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষের দিকে হলেও কোন সফলতা দেখাতে পারেনি উইভ। অথচ প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে বেতন গ্রহণ করেন নাইউ প্রু মারমা। যা জেলা পরিষদের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
উইভের তথ্যমতে কলাপাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র দেখানো হয় দুটি। একটি কাউখালী পোয়াপাড়ায় আরেকটি রাঙামাটি সদরের সাপছড়িতে। তবে সরেজমিনে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মাশরুম বিশেষজ্ঞ পার্বত্য অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নাসিম হায়দার বলেন, কলাপাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে এটা অবিশ্বাস্য। রাঙামাটিতে কেন পুরো বাংলাদেশেই তো এমন খবর নেই। জাতীয় মাশরুম উৎপাদন সেন্টারে আমি খোঁজ নিয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে কলাপাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদন হয় পুরো বাংলাদেশে এ ধরণের কোন তথ্য নেই।

মাশরুম উৎপাদন প্রকল্প এলাকা কাউখালী উপজেলা দেখানো হলেও এর সফলতা নিয়ে অবগত নয় প্রকল্প মনিটরিং কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি শুরুর দিকে আমাকে অবগত করা হয়। কিন্তু পরে আর এরা আমার সাথে যোগযোগ করেনি। আমি বলেছি কলাপাতায় মাশরুম উৎপাদন হলে আমাকে দেখানোর জন্য কিন্তু এরা দেখাতে পারেন

প্রকল্পটির সাবেক কো-অডিনেটর শুভম চাকমা বলেন, আসলে প্রকল্পটি ভূয়া প্রকল্প। কলাপাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদন করা হচ্ছে এটি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ ভূয়া।
যেখানে স্বাভাবিকভাবে মাশরুম উৎপাদনে পেশাদার মাশরুম উৎপাদনকারীরা ব্যর্থ হয় সেখানে সম্পূর্ণ নতুন এবং জানা নেই শুনা নেই কলাপাতা দিয়ে মাশরুম উৎপাদন কিভাবে সম্ভব? এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এ টেকনোলজি আমি ছাড়া কেউ জানবে না। প্রকল্পের টাকাগুলো আত্মসাৎ করতে নাইউ প্রু মারমা আমাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেছে। আর মেয়েদের পুন ব্যবহার যোগ্য প্যাড উৎপাদন তো শুরুই করতে পারেনি। পারবেও না বলেন শুভম।
অনুসন্ধানে জানা যায় শুভম চাকমাকে এ প্রকল্পে গুরুত্বপুর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও তার এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতাই নেই। ফলে কাজ না করে বসে বসে বেতন ভোগ করেছে শুভম চাকমা।
এ বিষয়ে শুভম চাকমা বলেন, তিনি কলা পাতায় মাশরুম চাষ ও পুন ব্যবহারযোগ্য প্যাড উৎপাদন নিয়ে আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এ প্রযুক্তি ইউটিউব থেকে দেখে শিখেছি। এটা আমি ছাড়া কেউ জানে না।

প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে প্রকল্প সমন্বয়ক পূর্ণ চন্দ্র চাকমা বলেন প্রকল্পটিতে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাইউ প্রু মারমা। এ ছাড়া একজন হিসাব রক্ষক একজন ফিল্ড অফিসার প্রকল্পের কার্যক্রম দেখাশুনা করছে। তবে পুন ব্যবহারযোগ্য প্যাড উৎপাদনের কাজ এখনো পুরোদমে শুরু করতে পরিনি। পরীক্ষামুলকভাবে পিবিএলের মাধ্যমে ৪/৫ পিস প্যাড বানিয়েছি।

পিবিএলের জনসংযোগ ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক নুকু চাকমা বলেন, পিবিএল বিএসটিআই অনুমোদিত নিজস্ব ল্যাবে স্বস্তি স্যানিটারি প্যাড উৎপাদন এবং বিক্রয় করে। সম্প্রতি উইভ আমাদের ল্যাবে জীবাণুমুক্তকরণ (ইউভি) করতে ৪/৫ টা পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড নিয়ে আসে। পিবিএল পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করে না।

এ বিষয়ে নাইউ প্রু মারমা বলেন, শুভম চাকমা দুর্নীতি করেছে। সে উইভ থেকে কম্পিউটার নিয়ে গেছে। তার সাথে আরেকজন আছে পলাশ বড়ুয়া। সে অফিসের স্টেশনারী জিনিস নিয়ে গিয়ে তার দোকানে বিক্রি করে। তাই তাদের উইভ থেকে বের করে দিয়েছি।
প্রকল্পের অগ্রগতি হিসেবে নাইউ প্রু মারমা বলেন, কলা পাতা থেকে মাশরুম উৎপাদন হয়েছে এটা সঠিক। এখন হচ্ছে না। এ ছাড়াও পুন ব্যবহারযোগ্য প্যাড উৎপাদনের কাজ চলছে। শুভমের কারণে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। সে এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞ ছিল না। আজ করব কাল করব করে সময় পার করে দিয়েছে। ফলে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে পারিনি। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। শুভম প্রতিষ্ঠানে অনেক ক্ষতি করেছে।
নাইউ প্রু মারমা বলেন, জেলা পরিষদের সদস্য পদ আজ আছে কাল নাই কিন্তু এনজিওটি আমার হাত ধরে গড়া। বর্তমানে আমার মেয়ে এটি দেখাশুনা করে আমি না। মেরী বলেন শুধু আমি কেন অনেক সদস্য এনজিওতে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা পরিষদ আইন লংঘন করে নাইউ প্রু মারমা দায়িত্ব পালন করছে কিনা জানতে চাইলে পরিষদের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিনহাশ মুরশীদ বলেন এ বিষয়েটি তিনি এখনো কোন কিছু জানেন না।
রাঙামাটি জেলার সিনিয়র আইনজীবী মোখতার আহমেদ বলেন, জেলা পরিষদের সদস্য হয়ে কোন সদস্য যদি অন্য কোন সংস্থা থেকে বেতন ভোগ করেন তাহলে সেটা হবে বেআইনী।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine

Recent Comments