রাঙামাটিতে বিকেএসপি স্থাপনের কথা হচ্ছে গত বছর থেকে। রাঙামাটিতে দ্রুত বিকেএসপি স্থাপন করার জোর দাবি স্থানীয়দেরও।
তবে বিকেএসপি, ক্রীড়া মন্ত্রনালয়, পার্বত্য মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় এগোচ্ছে না স্থাপনার কার্যক্রম। সমন্বয়হীতার সুযোগে গুরুত্বপূর্ণ এ পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে সক্রিয় একাধিক পক্ষ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় গত ১৪ অক্টোবর এক বিবৃতিতে জানায় রাঙামাটিতে বিকেএসপি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এরপর গত ১৬ অক্টোবর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে বিকেএসপি স্থাপনের দাবীতে কাপ্তাই উপজেলার ক্রীড়ামোদী সর্বস্থরের জনগণ, সাবেক বর্তমান খেলোয়াড়দের ব্যানারে কাপ্তাই মানববন্ধন হয়।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর রাঙামাটি সদর উপজেলায় বিকেএসপি স্থাপনের দাবীতে রাঙামাটি শহরে মানববন্ধন করে রাঙামাটির বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। একই দাবীতে গত ২২ অক্টোবর রাঙামাটি সদর উপর জেলার সকল ক্লাব প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেয়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরির কথা মাথায় রেখে বিগত সরকারের আমলে রাঙামাটিতে বিকেএসপি স্থাপনের জন্য বিগত সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন রাঙামাটি জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান।
জেলার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি জেলায় একাধিক জায়গায় পরিদর্শন, সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে শুরু করে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণের কাজ অনেকদুর এগিয়ে নিয়েছিলেন।
পরিদর্শন শেষে রাঙামাটি শহরের ঝড়াবিল মৌজায় বিকেএসপি স্থাপন এটি নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয় জেলা প্রশাসন। সরকার পরিবর্তন হলেও এ কাজ থেমে থাকেনি।
তার আলোকে গত ৪ আগস্ট প্রত্যাশি সংস্থার ৪টি জায়গা দেখতে রাঙামাটি সফরে আসেন বিকেএসপির মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুনীরুল ইসলাম।
তিনি চলে যাবার পর গত ১ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মো. সগীর হোসের নেতৃত্বে রাঙামাটি আসেন ৩ সদস্যর একটি পরিদর্শন দল। এ দলটিও রাঙামাটি শহরতলি ঝগড়াবিল, রাঙাপানির লুম্বিনী, কাউখালী উপজেলার রাঙিপাড়া, দেওয়ান পাড়াসহ মোট ৪টি জায়গা পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু সেগুলো না দেখে দলটি চলে যায় যায় কাপ্তাইয়ে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এ দলটির সফর তাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। তাদের কাছে প্রত্যাশী ৪ টি জায়গা পরিদর্শনে কোন আগ্রই ছিল না। তারা জমি দেখতে আসেনি। মুলত তাদের লক্ষ্য ছিল কাপ্তাইয়ের তাদের সুনিদির্ষ্ট একটি জায়গা চূড়ান্ত করা। যে জায়গায় তারা পরিদর্শন করেছে সেখানে জমি আছে মাত্র ৩৪ একর। অথচ জমি দরকার ৪০ একর।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এই দল ঢাকায় চলে গেলে জেলা প্রশাসনকে কাপ্তাইয়ে জমিটি নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে চিঠি দেয়া হয়।
একদিকে আন্দোলন অন্যদিকে এ চিঠিতে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে জেলা প্রশাসন।
চিঠির জবাবে গত ৬ অক্টোবর ২০২ স্মারক মুলে জেলা প্রশাসন যুব ক্রীড়া মন্ত্রলায়কে জানায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর, কাউখালি কিংবা কাপ্তাই উপজেলা কোনটার বিষয়ে সুপারিশ বা মতামত প্রদান করা হয়নি। সদর ও কাউখালি উপজেলার ২টি করে মোট ৪টি আবেদন ছিল। কাপ্তাই এর ব্যাপারে কোন আবেদন ছিল না।
জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিকেএসপি নিয়ে যা হচ্ছে, আমরা অবাক হচ্ছি। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। রাঙামাটি শহরে ঝগড়াবিলে বিকেএসপি হচ্ছে এটা তো অনেকটা চূড়ান্ত মনে করেছি। আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম ঝগড়াবিলে এ প্রতিষ্ঠান হলে রাঙামাটি তথা অন্য দুই পার্বত্য জেলার সন্তানরা সুবিধা পাবে। কিন্তু হঠাৎ কী হলো আমরা বুঝছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থাপনা নির্মাণে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত চাওয়ার নিয়ম থাকলেও কিছু জানে না তারা। পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিমল চাকমা জানান, রাঙামাটিতে বিকেএসপি হচ্ছে, এটি তাঁরা জানেন না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটিতে কোন জায়গায় বিকেএসপি হচ্ছে, এর সর্বশেষ তথ্য কী, এ নিয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়নি।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো হাবিব উল্লাহ মারুফ বলেন, ‘কোথায় বিকেএসপি হবে এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কোন প্রস্তাব চাওয়া হয়নি। রাঙামাটিতে কোথায় বিকেএসপি হচ্ছে এটা আমি নিজে জানি না।’
এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বিকেএসপি খুব প্রয়োজন। বিকেএসপি প্রতিষ্ঠায় যোগাযোগ নিরাপত্তা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে।’


                                    

