বুধবার, আগস্ট ২০, ২০২৫
মূলপাতাক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীলংঘাছড়ি চাকমার পাশে সেনাবাহিনী

লংঘাছড়ি চাকমার পাশে সেনাবাহিনী

জুরাছড়ি পার্বত্য জুরাছড়ির দুর্গম লেবারপাড়া গ্রামের এক কোণে দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছিলেন বিধবা লুংঘাছড়ি চাকমা (৬৫)।

স্বামীর মৃত্যু তার জীবন থেকে যেন সব আলোই কেড়ে নিয়েছিল। টিন আর বাঁশে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি নড়বড়ে কুঁড়েঘরে ঝড়-বৃষ্টির রাতগুলো তার জন্য হয়ে উঠত নিদারুণ কষ্টের।

নিজের অসহায় জীবনের বোঝা বহন করতে করতে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের অন্ধকারে হঠাৎ এক আলো জ্বলে ওঠে।

সেনাবাহিনীর মানবিক উদ্যোগে নতুন একটি বসতঘর পেয়ে লুংঘাছড়ির জীবনে ফিরেছে আশার আলো।

বুধবার দুপুরে জুরাছড়ি জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মুশফাক আমিন চৌধুরী, পিএসসি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরটি হস্তান্তর করেন।

মুহূর্তটি লুংঘাছড়ি জীবনে যেন নতুন জন্মের মতো। ঘরের চাবি হাতে নিয়ে তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি, আনন্দে চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা।

লংঘাছড়ি চাকমা বলেন, “আমার আর কিছু চাওয়ার ছিল না। শুধু মাথার ওপর একটা নিরাপদ ছাদ চেয়েছিলাম। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। সেনাবাহিনীর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

” ঘর হস্তান্তরের সময় পাশে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বায়েজীদ-বিন-আখন্দ, জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা, বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, দুমদুম্যা ইউপি চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সবার চোখে-মুখে তখন ছিল সন্তুষ্টির হাসি। অনুষ্ঠানে মেজর মুশফাক আমিন চৌধুরী বলেন, “শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সেনাবাহিনী সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চায়। মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবার কাজ অব্যাহত থাকবে।

” তিনি আরো জানান অতীব শীঘ্রই পর্যায়ক্রমে আরও ২০টি ঘর নির্মাণ করা হবে, যা গৃহহীনদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে দাঁড়াবে এবং জুরাছড়ি উপজেলার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবে। স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ি এলাকায় দারিদ্র্য আর কষ্ট যেন দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী।

কিন্তু সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগ তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। একজন বিধবার ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়তো একটি ছোট উদ্যোগ, কিন্তু এর প্রভাব পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বায়েজীদ-বিন-আখন্দ বলেন, “এ ধরনের মানবিক কর্মকাণ্ড পাহাড়ের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। এটি শুধু একটি ঘর নয়, বরং নিরাপত্তা আর মর্যাদার প্রতীক।” লুংঘাছড়ি চোখের জল সেই বার্তাই বহন করে—কখনো কখনো একটি ঘরই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Google search engine
Google search engine
Google search engine

Recent Comments